বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দিনাজপুর আত্রাই নদীর রাবার ড্যামের সেচ ব্যবস্থা : পাল্টে গেছে এলাকার জীবনমান

দিনাজপুর আত্রাই নদীর রাবার ড্যামের সেচ ব্যবস্থা : পাল্টে গেছে এলাকার জীবনমান

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম (দিনাজপুর): দিনাজপুর সদর উপজেলার শংস্করপুর ইউনিয়নে মোহনপুর আত্রাই নদীতে দেশের সর্ববৃহৎ রাবার ড্যাম নির্মাণে দুটি উপজেলার কৃষকদের কৃষিকাজে উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া সম্প্রতি জানান, কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সদর উপজেলার আত্রাই নদীতে রাবার ড্যাম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।  জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি এ রাবার ড্যাম নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর  করেছিলেন গত ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর।
তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে, দিনাজপুর এলজিইডি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে যুগ উপযোগী ও টিকসই পদ্ধতিতে প্রায় ২৬ কোটি টাকা  ব্যয়ে রাবার ড্যামটি নির্মাণ  কাজ সম্পন্ন করা হয়।  নির্মাণ কাজ শেষে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর এ রাবার ড্যাম এর  উদ্বোধন করেছেন।
দেশের সর্ববৃহৎ আত্রাই নদীর উপর রাবার ড্যামটি দিনাজপুর সদর ও চিরিরবন্দর  এ দুটি  উপজেলা বাসীর কৃষকদের  জন্য আশির্বাদ বয়ে এনেছে। এ রাবার ড্যামের কারণে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ছোঁয়া পাল্টে গেছে এলাকার কৃষি কাজে  আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন । মরু করণের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে কয়েক  হাজার হেক্টর ফসলি জমি। কৃষক পাচ্ছে সেচ সুবিধা। উৎপাদন হচ্ছে প্রায়  ৭ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য শস্য। এছাড়া মৎসজীবী পরিবারদের মিটছে মৌলিক চাহিদা। সৃষ্টি হয়েছে মাছ চাষের সু-ব্যবস্থ’া ।
জাতীয় সংসদের  হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি সম্প্রতি  জানান, কৃষি নির্ভর জনপদ দিনাজপুর জেলা । আমাদের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। এ এলাকার কৃষকরা গরীব ও প্রান্তিক চাষি। শুষ্ক  মৌসুমে পানির অভাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের চাষ-আবাদ করতে কষ্ট হতো।
তিনি বলেন ,আমার স্বপ্ন ছিল শুস্ক মৌসুমে আমাদের এ অঞ্চলের কৃষকরা যাতে সহজে চাষ  আবাদ করতে পারে। সে লক্ষ্য নিয়েই দেশের সর্ববৃহৎ রাবার ড্যাম  দিনাজপুর সদর উপজেলার মহনপুরে আত্রাই নদীতে স্থাপন করেছি। এ রাবার ড্যামটি নির্মাণ হওয়ার ফলে এ অঞ্চলের কয়েক  হাজার হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত ফসল আবাদ হবে প্রতি বছর।  এখান থেকে প্রায় ১০ হাজার কৃষক উপকৃত হচ্ছে । দেশের কৃষি অর্থনীতিতে এ রাবার ড্যামটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
দিনাজপুর এলজিইডি’র সহকারী  প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মোহনপুর আত্রাই নদীর  রাবার ড্যাম থেকে সেচ সুবিধা নিতে কৃষকদের দিতে হচ্ছেনা কোন অতিরিক্ত খরচ। এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভোবান হচ্ছে। ১৩৫ মিটার দৈর্ঘ এ রাবার ড্যামটি দিনাজপুর সদর ও চিরিরবন্দর দুটি  উপজেলা বাসীর জন্য আশির্বাদ বয়ে এনেছে।
দিনাজপুর মোহনপুর রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থ’াপনা  সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি  শাহ জামাল সরকার এবং শংকরপুর  ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক চৌধুরী জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এ রাবার ড্যাম নির্মাণ কাজের তত্বাবধান করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। তারা জানান, মোহনপুর আত্রাই নদীর উপর এ রাবার ড্যাম নির্মাণ হওয়ার ফলে সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন শংস্করপুর, শেখপুরা, ফাজিলপুর, শশরা, উথরাইল ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী চিরিরবন্দর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন  সাইতারা, আব্দুলপুর, ভিয়াইল এবং আউলিয়া পুকুর ইউনিয়নের  কয়েক হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। এতে উপকৃত হয়েছে ২ উপজেলার প্রায় ১০   হাজার পরিবার।  খরার মৌসুমে এ রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় সেচ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বছরে বোরো ধানের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা আর্থিকভাবে লাভোবান হচ্ছেন এ এলাকার কৃষকরা।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে আত্রাই ও কাকড়া নদীর ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পানিতে মাছ চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তারা বলেন, এ রাবার ড্যাম নির্মাণ হওয়ায় বেশী খুশি বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার এ এলাকার কৃষকরা। আনন্দে উেেদ্বলিত হয়ে রাবার ড্যাম এলাকার কৃষরা জানান, বোরো মৌসুমে পানির স্তর  নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো আবাদ নিয়ে তারা মারাত্মক দুঃশ্চিন্তায় থাকতো। এর আগে এ অঞ্চলের কৃষকদের দেড় থেকে দুশ ফিট গর্ত করে পাম্পের সাহায্যে কোন রকম জামিতে পানি সেচ দিতো।  রাবার ড্যাম নির্মাণ হওয়ায় বোরো আবাদের সেচ নিয়ে আর তাদের ভাবতে হয় না। দেশের সর্ববৃহৎ এ রাবার ড্যাম নির্মাণ করায় এলাকার কৃষক মিজানুর  রহমান, খয়রাত  আলী, ইব্রাহীম, এনামুল হক, আব্দুল আজিম, লুৎফর রহমান মন্ডলসহ হাজার হাজার কৃষক  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপিকে ধন্যবাদ এবং তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS